Blog

Keep up to date with the latest news

পয়সা-ওয়ালা

মাত্রাতিরিক্ত অর্থে মালিক  বা অতি ধনী বা ultra high networth (UHNW) বলে তাদেরকেই বিবেচনা করা হয়     যাদের সম্পদের পরিমাণ তিন কোটি ডলার বা তার বেশি  র্অথাৎ  এরাই  আজকের   পয়সাওয়ালা !! 

আর সুখের কথা হল বাংলাদেশে গত  এক দশকে সেই অতি ধনীর পরিমান  অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেড়েছে আর সেই সাথে পাল্লা দিয়ে  বিনিয়োগ উৎপাদন ভিত্তিক  বানিজ্য হ্রাস পেয়েছেআবার অন্য দেশে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু নিজের দেশে বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে ।।   বাংলাদেশী টাকায় যাদের সম্পদ আড়াই কোটি টাকারও বেশি তারাই অতি ধনী বা পয়সাওয়ালা  বলে বিবেচিত হন 

সম্প্রতি ওয়েলথ এক্স (Wealth x) নামক একটি আর্থিক গোয়েন্দা পরিসংখ্যান সংস্থা একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে( পরবর্তিতে প্রথমআলো তেও ছাপা হয়েছে )     যাতে বলা হয়েছে যে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে  ধনী মানুসের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে !! শুধু তাই নয় ,মাত্রাতিরিক্ত র্অথ সম্পদের অধিকারি হয়েছে অনেক !!  নিজস্ব গবেষণা   রিসোর্সে  তৈরীকরা     সংস্থাটির রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ২০১২ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশে অতি ধনী ব্যক্তির সংখ্যা ১৭. শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বিশ্বে এই হার সর্বোচ্চ এক্ষেত্রে চীনের অবস্থান দ্বিতীয় (১৩. শতাংশ) তবে চীন দ্বিতীয় হলেও সেখানে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বৈষম্য অতটা প্রকট নয় যতটা বাংলাদেশে , তৃতীয় অবস্থানে আছে ভিয়েতনাম (১২. শতাংশ) এই সময়ে অতি ধনীর  সংখ্যা ভারতে বৃদ্ধি পেয়েছে ১০. শতাংশ, হংকংয়ে . শতাংশ, আয়ারল্যান্ডে .০০ শতাংশ, ইসরাইলে . শতাংশ, পাকিস্তানে . শতাংশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে . শতাংশ হারে নিউইয়র্ক ভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি তিনটি মহাদেশে (এশিয়া, ইউরোপ আমেরিকা) ৫টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের গবেষণা পরিচালনা করে থাকে

ওয়েলথ এক্সএর রিপোর্টে উল্লেখিত উন্নত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে জার্মানি, কানাডা, ফ্রান্স, জাপান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, ইতালী, হংকং প্রভৃতি তবে এসব দেশে অতি ধনী বৃদ্ধির হার বাংলাদেশ থেকে অনেক কমওয়েলথ এক্সএর রিপোর্টে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে অতি ধনীর সংখ্যা উল্লেখ করেনি তবে অতি ধনী হবার হার উল্লেখ করেছে যা বর্তমান বিশ্বের এক নম্বর ধনী পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্বিগুণেরও বেশি 

যদি ধরে নেই ,, ২০১২ সালে বাংলাদেশে অতি ধনীর সংখ্যা ১০০ জন ছিল তাহলে ১৭. শতাংশ হারে ২০১৭ সালে চক্রবৃদ্ধি হারে এই সংখ্যা ২১৯ বা ২২০ এসে দাঁড়ায় অর্থাৎ অতি ধনী বা ২৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিকের সংখ্যা বাংলাদেশে প্রতি বছরে দ্বিগুণ হচ্ছে এছাড়াও  গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আরেকটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে রিপোর্ট হচ্ছে, বৈশ্বিক উদ্ভাবনী সূচক সংক্রান্ত এতে এশিয়ার শীর্ষ উদ্ভাবনী দেশসমূহের একটি তালিকা প্রদর্শন করা হয়েছে তালিকার অবস্থান অনুযায়ী ১৭টি দেশের নাম আছে ক্রম অনুযায়ী এগুলো হচ্ছে : () সিঙ্গাপুর () . কোরিয়া () জাপান () চীন () মালয়েশিয়া () থাইল্যান্ড () ভিয়েতনাম () মঙ্গোলিয়া () ভারত (১০) ব্রুনাই (১১) ফিলিপাইন (১২) ইন্দোনেশিয়া (১৩) শ্রীলঙ্কা (১৩) কম্বোডিয়া (১৫) নেপাল (১৬) পাকিস্তান এবং (১৭) বাংলাদেশ অর্থাৎ বাংলাদেশের অবস্থান সবার শেষে, যার অর্থ উদ্ভাভনে সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশে   

এই তালিকা দেখে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, শিক্ষা, সততা, দক্ষতা, পরিশ্রম, যোগ্যতা বা উদ্ভাবনী শক্তি বলে বাংলাদেশে অতি ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে না তাহলে প্রশ্ন হল তাহলে কিভাবে এই ধনী শ্রেণীর  আর্বি ভাব ঘটল ??   উত্তর জানতে কৌটিল্যর শরণাপন্ন হতে হবে না এটা পরিষ্কার বোঝা যায়  যে  শোষন আর র্অথনৈতিক নিপিড়নে একপক্ষের পকেট ভারি হচ্ছে আর একপক্ষ দরিদ্র থেকে আরো দরিদ্র হচ্ছে ।।    অনেকে বলতে পারেন তাহলে মাথাপিছু আয় বাড়ছে প্রবৃদ্ধির হার বাড়ছে!!  তাহলে ,একটা বিষয় পরিষ্কার করি ,দেশে যদি আগামি নছর কোনো অগ্রগতি নাও হয় তাতেও  কিছু না কিছু বাড়বে ,এটা একটা random Process , ।।তৈরি পোশাক শিল্পের সাথে সম্পর্কিত ব্যবসায়ীরা অঢেল সম্পদ গড়েছেন বলে বলা হয় দেশের রফতানি আয়ের আশি শতাংশ এই শিল্প যোগান দেয় গার্মেন্টস কর্মীদের বেতন কতআপনি শ্রমিকদের কথা যদি বাদও দেন  তবে আরেকটি তথ্য আপনাকে ভয় ধরিয়ে দিবে আর তা হল   দেশে কত বছরে বেকার দের  চাকুরির আবেদনে  সরকারের যা রাজস্ব    র্অজিত    হয়েছে তা আর আগে দেখা যায়নি সম্প্রতি র্গামেন্টস   শ্রমিকদের    জন্য আট হাজার টাকা মাসিক ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছেএবং সেই গামেন্টসেই মার্স্টা পাশ করা  অফিসারের বেতন 10000/-  ধরা হয়েছে !!!        শিক্ষার  বৈষম্য বঞ্চনার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত এর চেয়ে আর কি হতে পারে??  এখানে দুটো বিষয় খেয়াল করুন প্রথমটি হল  শিল্প মালিকদের আয় অনুযায়ি  শ্রমিক দের মজুরি এবং শিক্ষিত জনগোষ্ঠির শ্রমের মুল্যায়ন ।।

 সরকারি তথ্যানুযায়ী গত বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল . শতাংশ এই প্রবৃদ্ধির ফলে যে সম্পদ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে তা গুটিকয়েক ব্যক্তি গোষ্ঠী ভোগ করছে, তার ন্যায্য ন্যয় ভিত্তিক বণ্টন হচ্ছে না আবার অভিযোগ উঠেছে যে, আমাদের দেশে বর্তমানে যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তার সাথে কর্মসংস্থান এবং জনগনের   সম্পর্ক নেই গ্রামগঞ্জের রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট, পানি নিষ্কাশন সেচ ব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে শহর, নগর এবং মহাসড়কে ফ্লাইওভার উড়াল সড়ক তৈরির ফলে ধনিকঠিকাদার শ্রেণী লাভবান হচ্ছে গরীবরা নয় এই শ্রেণীর উন্নয়ন তথা ধনী থেকে অতি ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতির ভিত মজবুত হচ্ছে না ঠিকাদার রাজনীতিকরা অর্জিত অর্থ দেশে বিনিয়োগ না করে বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে আমদানি বাণিজ্যে ওভার ইনভয়েসিং নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে বাণিজ্য বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিবেশিত এক হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে আমাদের আমদানি ব্যয় রফতানি আয়ের ব্যবধান ৮০০ বিলিয়ন টাকা অতিক্রম করেছে ২০১৭ সালের Global Financial Integrity Report আরো ভয়াবহ এতে অবৈধ অর্থ পাচারে বাংলাদেশকে শীর্ষ দেশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ১১ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে আবার ২০১৬ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের রক্ষিত সঞ্চয়ের পরিমাণ ছিল ৬৮৩ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ যা ভারতীয়দের রক্ষিত আমানতের প্রায় কাছাকাছি আবার ২০০৫ সাল থেকে গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে বলে জিএফআই এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে এই অর্থ সময়ের বাংলাদেশের মোট জাতীয় বাে জটের প্রায় দ্বিগুণ রিপোর্টে প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী প্রতি বছর গড়ে পাচার হয়েছে ৫৩.৩৫২ কোটি টাকা বিশ্লেষকদের হিসাব অনুযায়ী ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত আরো অন্তত তিন লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে বিদেশে অর্থ পাচার, সরকারি বেসরকারি ব্যাংক এবং অর্থ প্রতিষ্ঠানসমূহের লাখ লাখ কোটি টাকার অর্থ লোপাট, ঋণ কেলেঙ্কারি, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, ডেস্টিনিসহ এনজিওসমূহের প্রতারণা আত্মসাৎ প্রভৃতি রয়েছে ।।  

এভাবেই ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে আর গরীবরা আরো গরিব হচ্ছে ,,,বৈষম্য শুধু বেড়েই চলেছে ।।   একের পর এক শিল্প বন্ধ হচ্ছে আর বিদেশি নির্মান শিল্প আর বিদেশি পণ্যের শপিং মলের বৃদ্ধি ঘটছে ,,,  আর তার নিচে ফ্লাই ওভারের পিলারে গ্রাম থেকে আসা নিম্নবিত্তর কান্না বেড়েই চলেছে ।।

তথ্য সহায়তা সহ বিশেষ কৃতজ্ঞতা : শাহ আবদুল হান্নান 

(সাবেক র্অথ সচিব )

ডি এম শফিক তাসলিম

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *