Blog

Keep up to date with the latest news

কর্পোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠায় চার্টার্ড সেক্রেটারি (সিএস) প্রফেশন

একটি কোম্পানির সংগঠন কাঠামোটি একটু গভীর থেকে পর্যবেক্ষণ করলেই আমরা বুঝতে পারি কোম্পানির বাহিরে থেকেও শেয়ারহোল্ডাররাই কেন সকল ক্ষমতার উৎস শেয়ারহোল্ডারদের দ্বারা মনোনীত বোর্ড অব ডাইরেক্টরস আসলেই কতটুকু তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে কোম্পানি পরিচালনা করছে, তার ওপরই নির্ভর করে কোম্পানির সক্ষমতা এবং ভবিষৎ প্রসপেক্ট, যা অনেকাংশেই তার চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের নির্ধারক হিসেবে কাজ করে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টকে যথাযথভাবে ম্যানেজ করে একটি কোম্পানি তখনই এতে সফল হবে যখন কোম্পানির ইন্টারনাল ম্যানেজমেন্টে থাকবে কমপ্লায়েন্স এবং কর্পোরেট সুশাসনের চর্চা আর এখানেই যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়, তিনিই হচ্ছেন কোম্পানি সেক্রেটারি

আবারো সেই কোম্পানির সংগঠন কাঠামোর দিকে ফিরে যাওয়া যাক শেয়ারহোল্ডারদের দ্বারা মনোনীত বোর্ড অব ডাইরেক্টরস বছর শেষে এজিএম এর মাধ্যমে তাদের সকল কর্মকান্ডের হিসাব কোম্পানিটির মালিক, তথা শেয়ারহোল্ডারদের রিপোর্ট করেন অপরদিকে বছরজুড়ে এসব কর্মকাণ্ড যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় এজন্য বোর্ড অব ডাইরেক্টরস আবার কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়োগ করে যারা তাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে বোর্ডকে রিপোর্ট করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক প্রকাশিত কর্পোরেট গভার্নেন্স গাইডলাইন অনুসারে বোর্ড চারজন ব্যক্তিকে নিয়োগ করে তারা হলেন ম্যানেজিং ডিরেক্টর/চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও), চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও), হেড অব ইন্টারনাল অডিট এন্ড কমপ্লায়েন্স এবং কোম্পানি সেক্রেটারি (সিএস) অর্থাৎ কোম্পানি সেক্রেটারি হলেন সেই ব্যক্তিদের মধ্যে একজন যিনি সরাসরি কোম্পানির এমডি/সিইওকে রিপোর্ট করেন একজন সিএফও যেখানে কোম্পানির ইনভেস্টমেন্ট এবং ক্যাপিটাল স্ট্রাকচার সম্পর্কিত তথ্যাদির বিষয়ে এমডি/সিইওকে অবহিত করেন, একজন সিএস সেখানে কোম্পানির লিগ্যাল এন্ড রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্স, কর্পোরেট গভার্নেন্স ইত্যাদি সম্পর্কে কোম্পানির সিইওকে রিপোর্ট করেন

কোম্পানির লক্ষ্য অর্জনে গুড গভার্নেন্স আর লিগ্যাল কমপ্লায়েন্সের গুরুত্ব এবং অনুপস্থিতির চরম মূল্যই সিএসকে করেছে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং স্বকীয় একটি প্রফেশন একজন কোম্পানি সেক্রেটারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করে থাকেন, যা মূলত সেই কোম্পানির কাজের পরিসরের ওপর নির্ভর করে এবং বোর্ড কর্তৃক পূর্বেই নির্ধারিত হয়ে থাকে সাধারণত কোম্পানি সেক্রেটারি লিগ্যাল কমপ্লায়েন্স, বিধিবদ্ধ রেকর্ড মেইনটেনেন্স, কর্পোরেট গভার্নেন্স কমপ্লায়েন্স, মিটিং ম্যানেজমেন্ট, ইন্টারনাল রিটার্ন ফাইলিং, ম্যানেজমেন্ট এডভাইজরি (মূলত লিগ্যাল এবং কর্পোরেট গভার্নেন্স বিষয়ক), এক্সটার্নাল পক্ষগুলোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা ইত্যাদি কর্মকান্ডের মাধ্যমে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ আইনগত সুরক্ষা নিশ্চিত করে এছাড়া কর্পোরেট ম্যানেজমেন্ট গভার্নেন্সের ক্ষেত্রে সিএস বিশ্বব্যাপী একটি স্বাধীন পেশা আমাদের দেশেও চার্টার্ড সেক্রেটারিশীপ প্রাকটিস কোম্পানি আইন এবং চার্টার্ড সেক্রেটারি আইন ২০১০ দ্বারা সমর্থিত নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান আইসিএসবি এর লাইসেন্স গ্রহণপূর্বক একজন চার্টার্ড সেক্রেটারি প্রাকটিসে এসে বিভিন্ন ধরণের সার্ভিস প্রদান করতে পারেন যেমন কর্পোরেট গভার্নেন্স সার্ভিস, সেক্রেটারিয়াল সার্ভিস, লিগ্যাল এডভাইজরি, ট্যাক্স সার্ভিস, রিপ্রেজেনটেটিভ সার্ভিস, কনসালটেন্সি সার্ভিস, কমপ্লায়েন্স অডিট, কর্পোরেট গভার্নেন্স অডিট, আরবিট্রেশন এন্ড কনসিলিঅ্যাশন, সিকিউরিটিজ ম্যানেজমেন্ট, কর্পোরেট রিস্ট্রাকচারিং, মার্জার এন্ড একুইজিশন, ডিউ ডিলিজেন্স, সিকিউরিটি কমপ্লায়েন্স এন্ড সার্টিফিকেশন ইত্যাদি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাম্প্রতিক এক প্রজ্ঞাপন অনুসারে বাংলাদেশে চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টদের পাশাপাশি চার্টার্ড সেক্রেটারিগণ ভ্যাট এজেন্ট হিসবে প্রাকটিস করতে পারবে

আমাদের দেশে চার্টার্ড সেক্রেটারির ধারণাটা অপেক্ষাকৃত নতুন এমনকি কোম্পানতে বোর্ড সেক্রেটারির ভূমিকা সম্পর্কিত বিষয়গুলোও তেমন পরিসরে আলোচিত হয়না মূলত এই ভূমিকা, বহুমুখী ক্ষেত্র এবং তা থেকে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান চাহিদাই সিএস কে বানিয়েছে একটি ইমার্জিং প্রফেশন বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে পরিচালিত দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি) একমাত্র প্রতিষ্ঠান যা এদেশে সিএস ডিগ্রি প্রদানের মাধ্যমে সুযোগ্য প্রফেশনাল তৈরী করছে, যারা কর্পোরেট জগতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কারিগর হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন

আইসিএসবি মূলত আইসিএবি এবং আইসিএমএবির এর মতোই ন্যাশনাল প্রফেশনাল বডি, যার মেম্বারশীপ, অর্থাৎ সিএস ডিগ্রি কর্পোরেট ক্যারিয়ারে যোগ করতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভ্যালু সিএস একটি আড়াই বছরের প্রফেশনাল কোর্স, যা পাঁচটি লেভেলে বিভক্ত (১৮ টি পেপারে মোট ১৮০০ মার্কস) প্রতিটি লেভেলের সময়সীমা ছয়মাস প্রথম তিন লেভেলকে বলা হয় এক্সিকিউটিভ লেভেল এবং শেষ দুই লেভেলকে বলা হয় প্রফেশনাল লেভেল নন বিজনেস ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি লেভেল বেশি পাস করতে হয় যা ফাউন্ডেশন লেভেল নামে পরিচিত সিএস কোর্সের ক্ষেত্রে লেভেল ওয়াইজ পাস করতে হয়

আইসিএসবিতে বছরে দুবার সিএস কোর্সে ভর্তির জন্য আবেদন করা যায় প্রতিবছর আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয় ডিসেম্বর জুন মাসে এক্সিকিউটিভ লেভেলে ভর্তির জন্য বিজনেস গ্রাজুয়েট এবং কমপক্ষে পয়েন্টের অধিকারী হতে হবে তবে কোনো পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয় ভর্তির জন্য প্রার্থীদের লিখিত নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে বাছাই করা হয় মোট ১০০ নম্বরের এই পরীক্ষায় লিখিত নৈর্ব্যক্তিক অংশের জন্য ৮০ এবং মৌখিক পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ থাকে ২০ নম্বর তবে ফাউন্ডেশন লেভেলের শিক্ষার্থীদের কোনো ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় না তাঁরা ফাউন্ডেশন লেভেল পাস করলেই এক্সিকিউটিভ লেভেল ভর্তি হতে পারে

সিএস কের্সের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ক্লাস করতে হয় ক্লাসগুলো নিয়ে থাকেন আইসিএসবি এর প্রফেশনালগণ যারা বিভিন্ন কোম্পানিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বপালন করছেন ফলে তাঁরা শিক্ষার্থীদের বইয়ের নলেজের পশাপাশি বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির বাস্তব কর্পোরেট প্রাকটিস সম্পর্কে ধারণা দিতে পারেন সিএস কোর্সের ক্লাস রুটিন এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে চাকরিজীবীরা খুব সহজেই এতে অংশ নিতে পারেন শুধুমাত্র শুক্র শনিবার ডে শিফটের ক্লাস থাকতে পারে, এছাড়া অন্যান্য দিন ইভিনিং শিফটে ক্লাস হয়ে থাকে (সন্ধ্যা .৩০ থেকে রাত .৩০) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য কমপক্ষে ৭৫% উপস্থিতি থাকতে হয়

এক্সিকিউটিভ এবং প্রফেশনাল লেভেলের পরীক্ষাগুলো পাসের সাথে ইন্টার্নশীপ এবং যথাযথ কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে আইসিএসবি এর মেম্বারশীপ দেয়া হয় মেম্বারদের ইনস্টিটিউট কর্তৃক বিভিন্ন শর্তাদি পালন এবং প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্টের জন্য বিভিন্ন ধরণের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে হয় দুই ধরণের মেম্বারশীপ রয়েছে এসোসিয়েট মেম্বারগণ এসিএস এবং ফেলো মেম্বারগণ এফসিএস হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন

সিএস কোর্সে ভর্তির সময় রেজিস্ট্রেশন, সেশন চার্জ আনুষঙ্গিকসহ মোট খরচ পড়বে ২০ হাজার ৬৫০ টাকা এক্সিকিউটিভ লেভেলের দশটি বিষয়ের জন্য খরচ পড়বে ৯১ হাজার ৪৫৫ টাকা এবং প্রফেশনাল পর্যায়ের আটটি বিষয়ের জন্য খরচ পড়বে মোট ৮০ হাজার ২৫০ টাকা এছাড়া ছয় মাস মেয়াদি ফাউন্ডেশন লেভেলের জন্য খরচ পড়বে মোট ২২ হাজার ৫০০ টাকা

আমাদের দেশের শিক্ষার গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে এসে প্রফেশনাল স্টাডির মাধ্যমে নিজেকে সমৃদ্ধ করা যে কতটা দরকার তা আমরা দেশের ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের দিকে লক্ষ্য করল খুব সহজেই বুঝতে পারি অপরদিকে কোম্পানিগুলোতে যোগ্য পদে যোগ্য প্রফেশনালের অভাবের কারণে কর্পোরেট সুশাসনের অনুপস্থিতি বেড়েই চলেছে এর ফলাফল যে কত ভয়াবহ হতে পারে তা আমরা বিপর্যয়ের মধ্যে থাকা দেশের ব্যাংকিং সেক্টর এবং ক্যাপিটাল মার্কেটের দিকে তাকালে খুব সহজেই বুঝতে পারি সিএস প্রফেশনের যথাযথ স্বীকৃতি, চর্চা এবং উন্নতি অবস্থা থেকে উত্তোরণের অন্যতম এক মাধ্যম হতে পারে, যা আমাদের দেশের সার্বিক অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতেও গুরুত্বপূর্ণ পালন করবে

লিখেছেন

Jakariya Utshab

BBA (Finance),DU

Special Thanks to Mohammad Sanaullah FCS sir & Shafiqul Alam, ACS sir

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *